বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪ , ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

modhura
Aporup Bangla

ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া যেমন দেখেছি 

শিল্প-সাহিত্য

এলিজা বিনতে এলাহী

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

আপডেট: ১৮:১৮, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সর্বশেষ

ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া যেমন দেখেছি 

ইমেইজটি তৈরি করেছেন রনি বর্মন

ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া !! 
যে কোন শহরের পুরোনো নামে ডাকতেই আমার বেশি ভালো লাগে । এই চর্চাটি শুরু হয়েছে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার বিভিন্ন শহর ঘুরতে গিয়ে । প্রতিটি শহরের প্রাচীন নাম জানতে বড্ড আনন্দ হতো । সেটি এখন বিশ্বভ্রমণেও খুঁজে বেড়াই । 
আজকের ভ্রমণ গল্প ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া অর্থাৎ আমেরিকার ওয়াসিংটন ডিসি শহরকে কেন্দ্র করে ।  
সব ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে আমেরিকার এই শহর অতটা জনপ্রিয় নয় ।আর একটি বড় কারনও রয়েছে , আমেরিকার এত এত অংগ রাজ্য , শহর আর সেখানকার অগনিত পর্যটন কেন্দ্র । তাই এই রকম ভূখণ্ডে নিজের পছন্দের গন্তব্য নির্বাচন করা রীতিমত কষ্টসাধ্য ।  
আমেরিকায় যাবার সুযোগ হয় মার্কিন সরকারের আমন্ত্রণ  পেয়ে । বিভিন্ন লেখায় কারণ উল্লেখ করেছি । পুনশ্চ ,  ছোট করে বলি মার্কিন সরকারের আমন্ত্রণ কি করে এলো । আইভিএলপি ২০২২ এর অংশগ্রহণকারী হিসেবে  আমি ভ্রমণ করেছি “ডিস্ট্রিক অব কলম্বিয়া “। আইভিএলপি হলো  ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর লিডারশিপ প্রোগ্রাম , মার্কিন সরকার  বিভিন্ন দেশ থেকে ভিন্ন ভিন্ন পেশার স্কলারদের নির্বাচন করে নিজ দেশে একটি কর্মশালার আয়োজন করে , যার মাধ্যমে আমেরিকার শিক্ষা, সংস্কৃতি ,ঐতিহ্য তুলে ধরা হয় সেই সব দেশের নির্বাচিত মানুষদের সামনে। এই পরিক্রমায় বাংলাদেশের  পাঁচ সদস্যের একটি দলকে আমন্ত্রন জানিয়েছিল মার্কিন সরকার । বাংলাদেশে মার্কিন সরকার এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে ১৯৫২ সাল থেকে , সারা বিশ্বে পরিচালিত হচ্ছে ১৯৪০ সাল থেকে  । যারা বাংলাদেশে হেরিটেজ কিংবা ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করছে এরকম পাঁচ ব্যক্তিকে নির্বাচন করা হয় । আমার জন্য একটি অভাবনীয় সুযোগ তৈরি হয় আমেরিকার ৪টি প্রদেশ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ঘুরে দেখবার ।  আর একটি তথ্য বলার লোভ সামলাতে পারছি না , বাংলাদেশের প্রথম আইভিএলপি অংশগ্রহণকারী ছিলেন আমাদের বঙ্গবন্ধু ! 
এবার আসি ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া অর্থাৎ ওয়াসিংটন ডিসি’র নামকরণ নিয়ে । আমেরিকার রাজধানীর প্রাচীন নাম ছিলো ‘ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া’। বর্তমানে এটি ওয়াশিংটন ডিসি নামে পরিচিত। ডিসি মূলত পূর্ব নাম ‘ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া’র সংক্ষিপ্ত রূপ।মেরিল্যান্ড ও ভার্জিনিয়া রাজ্যের কিছু অংশ নিয়ে ১৭৯০ সালে আমেরিকার প্রথম রাজধানী ফিলাডেলফিয়াকে ওয়াসিংটন ডিসিতে স্থানান্তর করা হয় । পোটোম্যাক নদীর তীরে অবস্থিত ওয়াশিংটন ডিসির জনসংখ্যা প্রায় ৬ লাখ।  
ওয়াশিংটন ডিসি শান্ত একটি শহর। বিশালাকার রাস্তা আর বড় বড় দালান-কোঠা দিয়ে  সুসজ্জিত। তবে এদের কোনটিই খুব উঁচু নয়। প্রতিটি দালানের সাথে মার্কিনিদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। আমেরিকার অন্যসব বড় বড় শহরে সব দালানগুলো বেড়েছে দৈর্ঘে  কিন্তু ওয়াশিংটন ডিসিতে সেটা বেড়েছে প্রস্থে ।নব্য দ্রুপদি স্থাপনা গুলো দারুন দৃষ্টিনন্দন ।  
আমার কর্মশালা ছিল ২১ দিনের । তার মাঝে ৭দিন কাটিয়েছি এই শহরে । কিছু রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানাদি , সভা সমিতিতে অংশগ্রহন করা ছাড়াও আমাদের ভ্রমণের কিছু আলাদা সময় দেয়া হয়েছিল । ৭দিনের পুরো ভ্রমণের গল্প এই ভ্রমণ রচনায় তুলে ধরছি না । কিছু কিছু বিশেষ স্থানের কথাই কেবল বলবো । ওয়াশিংটন ডিসিকে জাদুঘরের শহর বলা হয় । ১২টি মিউজিয়াম দেখবার সৌভাগ্য হয়েছে । তাদের উপস্থাপনা মুগ্ধ হবার মত একেবারে । এই শহরে মেমোরিয়াল , মনুমেন্ট , প্রয়াত প্রেসিডেন্টের বাসভবন ,নব্য দ্রুপদি স্থাপনা ,শহরতলীতে প্রকৃতির মনোলোভা দৃশ্য সব মিলিয়ে ভীষণ ঘোরলাগা এক শহর । 

পোটোম্যাক নদী

মহাকাশগামী যান “ Discovery” 

প্রায় ফুরিয়ে এসেছে আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ প্রোগ্রাম ২০২২ । শেষ ভিজিটিং শহর ছিল ভার্জিনিয়ার সার্লটভিলে । সেখানে বিদায় জানাতে সশরীরে উপস্থিত হলেন আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে আইভিএলপি এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার কার্লোস । 

শার্লটভিলে থেকে আমরা রওনা হয়ে ওয়ায়াসিংটন এয়ারপোর্টে যাবো । বিদায় বেলায় কার্লোস বললেন “ তোমাদের অবশ্যই ন্যাশনাল এয়ার এন্ড স্পেস মিউজিয়ামটি দেখা উচিত । When you are in  USA ,it is a must see destination “ । স্পেস মিউজিয়াম পরিদর্শন আমাদের ওয়ার্কশপ লিস্টের অন্তর্ভুক্ত ছিল না । উপরন্ত ওয়াসিংটন অবধি জার্নিটা লম্বা ছিল বিধা্য , গ্রুপের সবাই মনে মনে একটু নিমরাজি থাকলেও কেউই আপত্তি প্রকাশ করেনি । আমার মাঝে সেরকম কোন ভাবান্তর হলো না । কারন উড়োজাহাজ কিংবা মহাকাশগামি যান , এসব আমি কিছু বুঝি না , আগ্রহও নেই । তবে মহাকাশ পর্যটন শুরু হয়েছে , যা পর্যটনের নতুন ভাবনার একটি ক্ষেত্র এবং তা শুধুমাত্র প্রথম বিশ্বের অল্প কিছু দেশের জন্য প্রযোজ্য । 

ভার্জিনিয়া থেকে ওয়াশিংটন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট অব্ধি যেহেতু বাসে করে যাবো , তাই পথিমধ্যে এই মিউজিয়াম পরিদর্শন খুবই যুক্তিপুর্ন ।  

মহাকাশ নিয়ে পরিবারে আগ্রহ আছে কেবল আমার ছোট ভাই ইমনের । ওর কাছেই অল্প বিস্তর শুনি যখন পারিবারিক আড্ডায় বসি । সত্যি কথা বলতে , স্পেস মিউজিয়াম নিয়ে গুগল করবার পরও সেরকম আগ্রহ বোধ করিনি । কারন ২১ দিনের পরিভ্রমণে বেশ কয়েকটি মিউজিয়াম খুব গভীর ভাবে দেখেছি ও জেনেছি কাজের অংশ হিসেবে । 

কিন্তু স্বীকার করতে বাধা নেই , স্মিথসোনিয়ান এয়ার অ্যান্ড স্পেস মিউজিয়াম স্টিভেন এফ. উদভার-হ্যাজি সেন্টারে স্পেস শাটল ( মহাকাশ যান ) পরিদর্শন আমাকে যার পর নাই মুগ্ধ করেছে । এত বড় বড় উড়োজাহাজ , মহাকাশ যান এক জায়গায় জড়ো করে পরিদর্শনের ব্যবস্থা করার পদ্ধতিটি দারুন উৎসাহ ব্যঞ্জক ।

রাইট ব্রাদার্সের প্রাচীনতম প্লেন থেকে শুরু করে আধুনিক প্লেন সবই আছে এখানে। আস্ত আকাশযান গুলো রেখে দিয়েছে এখানে । 

সেই থেকেই বোঝা যাচ্ছে মিউজিয়ামের বিশালতা ! মিউজিয়ামে আমি যে পথ ঢুকেছি , কিছুদূর যাবার পরই দেখলাম কনকর্ড ।এটিকে অবশ্য অতিরিক্ত শব্দ দূষনের কারণে পৃথিবীতে বাতিল করা হয়েছে। কনকর্ড একবার বাংলাদেশে এসেছিল । তখন আমি ছোট ।মনে আছে কেউ কেঊ গল্প করেছিল উত্তরা অনেক উঁচু বিল্ডিং এর দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছিল । কতটুকু সত্য ছিল জানি না । 

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট প্লেন, বোমাবাজ দীর্ঘ ফাইটার প্লেন, সব ধরনের মিসাইল কি নেই এখানে! তবে সবচেয়ে ভাল লেগেছে ডিসকভারী দেখে। এটা মহাশূণ্য পাড়ি দিয়ে এখন এই মিউজিয়ামে অবস্থান করছে । 

ডিসকভারী সম্পর্কে এই কথা গুলো লেখা রয়েছে মিউজিয়ামে - 
সবচেয়ে বেশি সময় ধরে চলা অরবিটার, ডিসকভারি ১৯৮৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ৩৯ বার উড়েছে —এটি যে কোনো মহাকাশ যানের চেয়ে বেশি মিশন সম্পন্ন করেছে — মহাকাশে মোট ৩৬৫ দিন ব্যয় করেছে। ডিসকভারির দীর্ঘ বছরের পরিসেবার হাইলাইটগুলির মধ্যে রয়েছে মীর স্পেস স্টেশনে প্রথম ডকিং মিশন, আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের সাথে প্রথম ডকিং এবং হাবল স্পেস টেলিস্কোপ স্থাপন । ডিসকভারি প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান নারী কমান্ডার দ্বারা উড্ডয়ন করা হয়েছিল এবং প্রথম নারী মহাকাশযানের পাইলট দ্বারা চালিত হয়েছিল।

ডিসকভারীর সামনে মিনিট কুড়ি অকারণেই দাঁড়িয়ে ছিলাম । মিউজিয়ামের আলো আধারিতে ভালো ছবি তুলতে পারছিলাম না , তার উপর ডিসকভারীর সামনে ছিল পর্যটকদের দারুন ভীড় । মন ভরছিল না কিছুতেই । ডিসকভারির চারদিকে একবার ঘুরতেই তো ৫মিনিট লাগে । সাথে থাকা জামিল ভাই তাড়া দিলেন ‘ আপা , একটিতে এত সময় দিলে , পুরো মিউজিয়াম কখন দেখবেন “ । তাই তো ! 

ডিসকভারি দেখা শেষ হলে , দেখলাম অ্যাস্ট্রোনাটদের চাঁদে ব্যবহার করা সেই স্পেস স্যুট। মিউজিয়াম থেকেই জানতে পারলাম , এই পর্যন্ত ১২ জন আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনাট চাঁদে পা রেখেছেন । অনেকে ভুল করে, হয়ত ঐ অ্যাপোলো-১১ তে আর্মস্ট্রং আর অলড্রিনই শুধু চাঁদে গিয়েছিলেন । এই মিউজিয়ামে আরউইনের (১২ জনের একজন) পুরো স্পেস স্যুটটা আছে। 

প্রজাপতি ও মাকড়শাও মহাকাশ দর্শন করেছে । প্রজাপতি গুলো জিরো গ্র্যাভিটিতে তাদের পুরো লাইফ সাইকেল সম্পন্ন করেছে সফল ভাবে, কোন সমস্যা হয় নি। আর মাকড়শার ক্ষেত্রে দেখা হয়েছে এই ছোট্ট মাকড়শা গুলো জিরো গ্রাভিটিতে, একটা জাল পৃথিবীতে যেমনটা নিখুঁত ভাবে তৈরী করতে পারে সেখানে পারে কিনা। দেখা গেছে প্রথম দিকে অসুবিধা হয়েছে, পরে সে নিজেই তৈরী করে নিয়েছে। মাকড়শা দুটোর নাম আনিতা এবং এরাবেলা। 

স্পেস মিউজিয়ামের বর্ননা এত অল্পতে শেষ হতেই পারে না । ঠিক মত বর্ননা করলে ছোট একটি বুকলেট তৈরি হয়ে যাবে ! ফিরবার সময় সুভেনির শপে ঢুঁ দিলাম । মনে মনে কার্লোসকে ধন্যবাদ জানালাম ।

ক্যাপিটল বিল্ডিং

যে পাঠাগার আমার বিশ্ময়কেও হার মানায় 
ছাত্র অবস্থায় আমাদের এক শিক্ষকের কাছে শুনেছিলাম লাইব্রেরী অব কংগ্রেস সম্পর্কে দারুন এক তথ্য ।তিনি বলেছিলেন ,“ এই সংগ্রহশালার তাক গুলো পাশাপাশি সাজালে ,তা প্রায় ৫০০ মাইল দীর্ঘ হবে“ । মনে মনে ছবি আঁকার চেস্টা করেছি আসলে এই পাঠাগারের অবয়ব কেমন হবে । কোন অবয়ব দাঁড় করাতে পারিনি , কারণ তখন বিশ্ব ভ্রমণের কোন অভিজ্ঞতাই ছিল না । সেসময় গুগল আংকেল না থাকবার কারনে বড় বড় পাঠাগার , বড় স্থাপনা কেমন হয় কোন ধারনা ছিল না ।তখন ভেবেছি আসলে কি এই পাঠাগার দেখবার কোন সুযোগ ঘটবে আমার জীবনে ! মেঘে মেঘে মেলা বেলা পার করে এই তো অল্প কদিন আগেই চোখ ভরে দেখে এলাম অনন্য এক গ্রন্থাগার !  
কোভিড পরবর্তি সময়ে , একদিন আগ থেকেই অনলাইনে কনফার্ম করতে হয় নিজের অবস্থান । টাইম স্লট ভাগ করা থাকে , নিজের পছন্দ মত সময় নির্ধারন করে নিতে হয় । একসাথে বেশি লোকের সমাগম যাতে না হয় , সেই জন্যই এই ব্যবস্থা । দুদিন চেস্টা করার পর সফলকাম হয়েছি ,  তাও আবার প্রবাসী এক বন্ধুর সহায়তায় । 
নির্ধারিত দিন ও সময়ের কিছু আগে গিয়েই উপস্থিত হলাম গ্রন্থাগারের সামনে । নিরাপত্তা বলয় পার হয়ে প্রবেশ করলাম জেফারসন বিল্ডিং এ । ঢুকে তো চোখ ছানাবড়া !এটি গ্রন্থাগার ! রোমান স্থাপত্য শৈলীতে সাজানো পুরো স্থাপনাটি । দেয়াল , ছাদ , মেঝে , চারদিকের সাজসজ্জা , তৈলচিত্র , ভাস্কর্য ইঞ্চি ইঞ্চি করে উপভোগ করার চেস্টা করছি । ছবি তুলবো , ভিডিও করবো , নাকি শুধু দেখতেই থাকবো । দ্বিধান্বিত অবস্থায় থাকলাম বেশ কিছুক্ষন ।  পুরো পরিবেশের সাথে মনের খাপ খাওয়াতে খানিকটা সময় লেগেছে ।  নিরাপত্তা বলয় পার হবার পর কিছু বুকলেট আর লাইব্রেরী ভ্রমণের ম্যাপ হাতে নিয়ে প্রবেশ করেছিলাম । থিতু হবার জন্য এক কোণায় দাঁড়িয়ে সেগুলো পড়তে আরম্ভ করলাম । 
সেই বুকলেট গুলো থেকেই জানলাম লাইব্রেরী অব কংগ্রেসের ইতিহাস এই গ্রন্থাগারের বয়স ২২২ বছর । ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকান রাষ্ট্রপতি জন অ্যাডামস যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যালয় ফিলাডেলফিয়া থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে কংগ্রেস থেকে অনুমোদন নেন। 
এই সময় ওয়াশিংটন ডিসিতে কংগ্রেসম্যানদের নানা ধরনের তথ্য সংগ্রহ ও বইপত্র ব্যবহারের জন্য কোনো উপযুক্ত গ্রন্থাগার ছিল না। রাষ্ট্রপতি অ্যাডামস কেবল কংগ্রেস সদস্যদের ব্যবহারের জন্য মাত্র ৫ হাজার ডলার ব্যয়ে একটি ছোট লাইব্রেরি স্থাপনের জন্য কংগ্রেস থেকে অনুমতি নেন । ইংল্যান্ড থেকে বই এনে খুব ছোট পরিসরে ক্যাপিটল প্রাসাদের পাশেই এই লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা হয় । প্রথমে শুধু কংগ্রেসের লোকদের ব্যবহারের জন্যই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে নাম রাখা হয় ‘দ্য লাইব্রেরি অব কংগ্রেস’। কালক্রমে এর আকৃতি ও সংগ্রহের বিশালত্বের সাথে সাথে লাইব্রেরির দরজা খুলে দেয়া হয় সর্বসাধারণের জন্য।১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে পুরো লাইব্রেরীটি পুড়িয়ে দেয় ইংরেজ সৈন্যরা । যুদ্ধ শেষে আবার গড়ে তোলা হয় দ্য লাইব্রেরী অব কংগ্রেস । 
জেফারসন বিল্ডিং 
আমি এখন যে বিল্ডিং দেখে বিস্মিত হচ্ছি এটির নির্মানকাল ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দ । এছাড়াও আরও দুটি বিল্ডিং আছে । লাইব্রেবীর জন্য প্রথম তৈরী হয় এই স্থাপনাটি । ৫০ জন সুনির্বাচিত স্থপতি, ভাস্কর ও চিত্রকর লাইব্রেরি বাড়িটি গড়ে তোলেন। অন্য বাড়ি গুলো পরে তৈরি হয়। জেফারসন বিল্ডিংয়ের সবচেয়ে বড় পড়ার ঘরটি তিন তলায়।  
এই স্থাপনার মেঝে থেকে পাথরের স্তম্ভগুলো ১৬০ ফুট উঁচু। শুধু এই একটি হলেই ৪৫,০০০ হাজারেরও অধিক রেফারেন্স বই আছে। ২১২ জন পাঠক একসাথে বসে পড়তে পারেন এই একটি হলঘরে। এটি ছাড়া আরও পড়ার ঘর আছে। প্রতিটি ডেস্কে পৃথক আলো, আরামদায়ক চেয়ারের ব্যবস্থা আছে। পড়বার স্থানটি পাঠক বিহীন ছিল করোনা পরিস্থিতির জন্য । 

লাইব্রেরি অব কংগ্রেস
জন এডামস ও জেমস ম্যাডিসন মেমোরিয়াল বিল্ডিং
জেফারসন বিল্ডিংয়ে লাইব্রেরির স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় এই বাড়ির পেছনে তৈরি হয় জন অ্যাডামস বিল্ডিং , নির্মানকাল ১৯৩৯ সালে । সাজসজ্জায় জেফারসন বিল্ডিংয়ের মতো না হলেও বাড়ির সামনের দিক সুন্দর মার্বেল পাথরে মোড়া আর তার প্রধান প্রবেশপথে ব্রোঞ্জের বিরাট দরজা। তাতে শোভা পাচ্ছে বারোটি মনুষ্য-মূর্তি। এই চমৎকার মূর্তিগুলো সেসব ঐতিহাসিক পুরুষদের, যারা পৃথিবীর নানা দেশে লেখার হরফ আবিষ্কার করেছিলেন।কলেবর বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় , ১৯৮০ সালে নির্মান হয় জেমস ম্যাডিসন মেমোরিয়াল বিল্ডিং । এই তিনটি স্থাপনাতে সাধারণ পাঠকদের জন্য ২১টি পড়ার রুম রয়েছে।

দুস্প্রাপ্য বই আর ম্যাপের এক অনন্য সংগ্রহ শালা 
প্রেসিডেন্ট জেফারসনের নিজস্ব পাঠাগারে অনেক দুর্লভ সংগ্রহ ছিল । সেগুলো তিনি লাইব্রেরী অব কংগ্রেসে দেবার আগ্রহ প্রকাশ করেন । জেফারসনের সংগ্রহ থেকে ৬,৪৮৭টি বাছাই করা গ্রন্থ লাইব্রেরী কিনে নেয় । এভাবেই লাইব্রেরির জন্য বই সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয় । 
বর্তমানে লাইব্রেরীতে প্রায় ৫০০টি ভাষার বই সংরক্ষিত রয়েছে। এখানে ২.৯ মিলিয়নের মতো আইনের বই, প্রায় ৭ লক্ষের মতো উত্তর আমেরিকান অঞ্চলের বই, সাড়ে সাত লক্ষের মতো ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভাষার বই , আফ্রিকা ও মধ্য এশিয়া বিভাগে রয়েছে ৬ লক্ষের অধিক বই। এশিয়ান বিভাগের রয়েছে প্রায় ৩ লক্ষের মতো বই। শুধু তা-ই নয়, প্রায় দেড় কোটির ওপর বই ও পুস্তিকা আছে, আছে সাড়ে তিন কোটির ওপর পান্ডুলিপি ও পুঁথি, যার মধ্যে আমেরিকার রাষ্ট্রপতিদের কাগজপত্র, বিখ্যাত লেখক ও শিল্পীদের পান্ডুলিপি ও চিত্রও রয়েছে। এমনকি বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের খসড়াও এতে আছে।
এছাড়াও এখানে আছে চল্লিশ লক্ষের ওপর ম্যাপ, যা খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতাব্দী থেকে একেবারে হাল আমল পর্যন্ত। আর আছে ষাট লক্ষ গানের স্বরলিপি, চিঠিপত্র, বাদ্যযন্ত্র, রেকর্ড, টেপ, ক্যাসেট ইত্যাদি। আছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা এক কোটির মতো নানা দুষ্প্রাপ্য ছবি ও ফটোগ্রাফ এবং বারোশ খবরের কাগজের নিয়মিত সংখ্যার ফাইল। প্রায় আড়াই লক্ষের ওপর চলচ্চিত্র ও ডকুমেন্টরি ফিল্ম এখানে আছে।
লাইব্রেরির অমূল্য সংগ্রহ দুটি বাইবেল,  গুটেনবার্গের ছাপা বাইবেল আর মেইনজের হাতে আঁকা ছবিসহ বিরাট আকারের বাইবেল। 
দ্য লাইব্রেরী অব কংগ্রেসের সংগ্রহ থেমে নেই। প্রতি মিনিটে গড়ে এখানে ১০/১৫ বই ও কাগজপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে, অর্থাৎ এই গ্রন্থাগারে দৈনিক গড়ে বারো হাজারেরও বেশি বিষয় সংগৃহীত হচ্ছে।
আমার জন্য নির্ধারিত ছিল ৩ঘন্টা সময় । তিন ঘন্টায় পুরো লাইব্রেরি ঘুরে দেখা যায় ,কিন্তু এর গুরুত্ব আর ব্যাপ্তি ধারন করা কিংবা অনুধাবন করা সম্ভবপর নয় বলে আমার মনে হয় । দারুন এক ভালোলাগা নিয়ে ওয়াশিংটনের দিনটি ফুরালো ।  
ক্যাপিটল বিল্ডিং 
মার্কিন পার্লামেন্ট ভবনের নাম ক্যাপিটল হল । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতীক হিসাবে বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত, ক্যাপিটল হল প্রতিনিধি পরিষদ এবং সিনেটের আসন। রোমের সেন্ট পিটারের গম্বুজের উপর ভিত্তি করে বিশাল গম্বুজটি ওয়াশিংটনের অন্য সব ভবনের উপরে দাঁড়িয়ে আছে।
ওয়াশিংটনের মতোই, ১৭৯৩ এবং ১৮১২ সালের মধ্যে কেন্দ্রীয় অংশটি নির্মিত হওয়ার পর থেকে বিল্ডিংটি কয়েক বছর ধরে বেড়েছে। সর্বশেষ সংযোজন হয়েছে ১৯৫৮ থেকে ১৯৬২ সালে । আমরা যখন সেখানে গেলাম দেখলাম বেশ কিছু সংস্কার তখনও চলছে । তাই বেশ কিছু অংশ ঢাকা অবস্থায় ছিল । বিখ্যাত ক্যাপিটল বিল্ডিং সেরকম উপভোগ করতে পারিনি । তবে চারদিকের অবারিত সবুজ আর বিশাল চত্বর আসলেই মনকাড়া । 

লিংকন মেমোরিয়াল 
ওয়াশিংটনের সমস্ত স্মৃতিসৌধের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় লিঙ্কন মেমোরিয়াল । 
এর কেন্দ্রে রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কনের একটি ১৯ ফুট মার্বেল মূর্তি রয়েছে যা ৩৬টি কলাম দ্বারা বেষ্টিত, লিঙ্কনের মৃত্যুর সময় বিদ্যমান প্রতিটি রাজ্যের জন্য একটি। এটি বিখ্যাত ফ্রেঞ্চ ভাস্কর ড্যানিয়েল চেস্টার দ্বারা ডিজাইন করা সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ। জুলস গুয়েরিন ভিতরের দেয়ালে ম্যুরাল এঁকেছেন, যা লিঙ্কনের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে । মুর্তিটির দিকে তাকালে মনে হবে লিংকন এখনই কথা বলে উঠবেন । কোন ভাস্কর্য এত জীবন্ত হতে পারে এখানে না এলে বুঝতে পারতাম না । 
জর্জিয়া মার্বেলে, ফরাসী শিল্পী ড্যানিয়াল চেস্টার এর তৈরী আমেরিকার ১৬ তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের মুর্তিটি সত্যিই মাস্টারপিস...!! সমাধি স্তম্ভের কথা বলতে গেলে পিরামিডের পরে কোন ব্যক্তির স্মৃতিস্তম্ভ আমার এত ভালো লেগেছে। আর গোটা স্মৃতি কমপ্লেক্সটি গ্রীক, মিশরীয় আর রোমান স্থাপত্যকেও হার মানিয়েছে।

 প্রেসিডেন্ট লিংকনের মেমোরিয়াল

হোয়াইট হাউজ 

নামটি বিশ্বব্যাপী কারোই অজানা নয় । ১৬০০ পেনসিলভ্যানিয়া অ্যাভিনিউ, ওয়াশিংটন ডিসি, এই ঠিকানা যে ত্রিতল বাড়িটির, তার নাম হোয়াইট হাউস। সেই ছেলেবেলা থেকে শুনে আসছি হোয়াইট হাউজ । হোয়াইট হাউজের অনেক তথ্যই সবার জানা রয়েছে । তারপরও ছোট করে বলছি – 

হোয়াইট হাউস হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন। জর্জ ওয়াশিংটন ব্যতীত প্রতিটি রাষ্ট্রপতির বাড়ি, এটি মূলত জেমস হোবান দ্বারা ১৭৯২  সালে নির্মিত হয়েছিল এবং ১৮১৪ সালে ব্রিটিশ বাহিনীর দ্বারা পুড়িয়ে ফেলার পরে ১৮১৮ সালে পুনর্নির্মিত হয়েছিল। 

ভবনটির বিভিন্ন জায়গায় আগুন ও ধোঁয়ার দাগ ঢাকতে এর দেয়ালে সাদা রঙ করা হয়। সেই থেকে মূলত এটি ‘হোয়াইট হাউস’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে থাকে। এই নামের স্বীকৃতি পেতে সময় লাগে আরও ৮৫ বছর। ১৯০২ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থিয়েডোর রুজভেল্ট এই নামের স্বীকৃতি দেন। তখন থেকে সরকারিভাবে এর নামকরণ করা হয় ‘হোয়াইট হাউস’।
আমাদের ট্যুর গাইড বলছিল আগে হোয়াইট হাউজের সামনের চত্বরে খানিকটা স্থানে প্রবেশাধিকার ছিল কিন্ত এখন রাজনৈতিক জটিলতার কারনে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে । দূর থেকেই হোয়াইট হাউজ দেখে , সামনে দাঁড়িয়ে একটি গ্রুপ ছবি তুলে মনোবাসনা খানিকটা উপশম করলাম । 

ওয়াশিংটন মনুমেন্ট 

ওবেলিস্ক আদলে নির্মিত ৫৫৫ ফুট উঁচু ওয়াশিংটন মনুমেন্ট । 
জাতির প্রথম রাষ্ট্রপতিকে সম্মান জানাতে ওবেলিস্ক নির্মাণের কাজ সুষ্ঠুভাবে এগোয়নি। এটির পরিকল্পনা  ১৭৪৩ সালে কংগ্রেস দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল, কিন্তু ১৮৮৪  সাল পর্যন্ত কোন কাজই হয়নি । ১৮৫৪ সালে যখন টাওয়ারটি ১৫৬ ফুট উচ্চতায় পৌঁছেছিল, তখন রাজনৈতিক কলহ এবং তহবিলের অভাব কয়েক বছর ধরে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায় , এবং গৃহযুদ্ধ আরও বাধা সৃষ্টি করে । এটি নির্মান শেষ হয় ১৮৮৫ সাল নাগাদ ।  
পুরো ওয়াশিংটন শহরকে দেখতে চাইলে এই স্তম্ভের সর্বোচ্চ তলায় যাবার সুযোগ রয়েছে লিফটের সাহায্যে । স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিটি ৫০টি আমেরিকান পতাকার একটি বৃত্ত দ্বারা বেষ্টিত। 

 ওয়াসিংটন মনুমেন্ট
জেফারসন মেমোরিয়াল ও টাইডাল জলাধার 
থমাস জেফারসন মেমোরিয়াল...!! 
আমেরিকার স্বাধীনতার জনক ও তৃতীয় রাস্ট্রপতি। "সর্বোত্তম শাসক তিনিই, যিনি সবচেয়ে কম শাসন করেন। কারণ শাসিতেরা নিজেরাই নিজেদেরকে শৃঙ্খলিত করে নেয়!” 
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই যখন এ উক্তি করেছিলেন জেফারসন, তখনই ইতিহাসে তার নাম লেখা হয়ে যায় একজন উদার শাসক হিসেবে, যার কাছে সততাই ছিল জ্ঞানের প্রথম অধ্যায়।
স্মৃতিস্তম্ভটি ওয়াসিংটন শহরে পটোম্যাক নদীর তীরে অবস্থিত। নব্য এই ধ্রুপদী ভবন দারুন মনকাড়া !

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় রাষ্ট্রপতি টমাস জেফারসনের গম্বুজযুক্ত সাদা স্মৃতিসৌধের নকশাটি রোমান প্যান্থিয়নের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে ।  এর নিম্ন গম্বুজটি ৫৪ টি আয়নিক কলাম দ্বারা বেষ্টিত । ভিতরে কলামগুলির মধ্য দিয়ে একটি নাটকীয় সিলুয়েটে একটি দাঁড়িয়ে থাকা জেফারসনের ১৯ ফুট মূর্তি । চারপাশে স্বাধীনতার ঘোষণা এবং অন্যান্য লেখার খোদাই করা অংশ।
টাইডাল পুলের শেষ প্রান্তে স্মৃতিস্তম্ভটি একা দাঁড়িয়ে আছে । জলের ধারের চারপাশে চেরি গাছ রয়েছে। প্রতিটি বসন্তে যখন ফুল ফোটে, তখন বেসিনের চারপাশে গোলাপী মেঘে ছেয়ে যায় ।
আর্লিংটন জাতীয় সমাধিস্থল 
যে কোন সমাধিস্থল আমার অন্যতম পছন্দের স্থান । মার্কিন জাতীয় সমাধিস্থল দেখবো না সেটি কি করে হয় ! পোটোম্যাক নদীর ওপার থেকে আধুনিক শহরকে উপেক্ষা করে পাহাড়ের ধারে এক শান্ত নিবিড় পরিবেশে এই সমাধিস্থল । আর্লিংটন ন্যাশনাল সিমেট্রি দেখলে আমেরিকান পুরো ইতিহাস জানা হয়ে যায় । 
প্রবেশ করে মনে হচ্ছিল আসলে কোন দিক থেকে শুরু করবো । হেঁটে বেড়াবার সময় মনে হচ্ছিল আসলে কি পুরো সমাধিস্থল ৩/৪ ঘন্টায় ঘুরে দেখা সম্ভব ! গোটা দিন অতিবাহিত করলেও সম্ভব নয় ! এতই বিশাল এই স্থান । যেন পুরো এক শহর । 
এর সবচেয়ে পরিচিত ল্যান্ডমার্কগুলি হল অজানা সৈনিকের সমাধি, রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডির সমাধিস্থল এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আইও জিমাতে পতাকা উত্তোলনের চিত্রিত ইউএস মেরিন কর্পস ওয়ার মেমোরিয়াল।

আর্লিংটন জাতীয় সমাধিস্থল
সিমেট্রিতে প্রবেশের আগে অভ্যর্থনা কক্ষ থেকে ম্যাপ সংগ্রহ করে নেয়া ভালো , তাতে পথ খুঁজে পেতে বেশ সুবিধা হবে কারন চত্বরটি বেশ বড় । 
এর মধ্যে নার্সদের সমাধি , ইরান রেসকিউ মিশনের হতাহত এবং বিভিন্ন যুদ্ধ ও দল রয়েছে, যার মধ্যে একটি লেফটেন্যান্ট সিএমডিআরের সমাধি রয়েছে। রজার বি. চ্যাফি এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল ভার্জিল আই. "গাস" গ্রিসম, যারা তাদের অ্যাপোলো মহাকাশযানে আগুনে নিহত হয়েছিল। 
শহরের ভেতর অন্য এক শহর ।

জ্বী , জর্জ টাউন । ওয়াশিংটনের ঐতিহাসিক ড্রিস্টিক বলা হয় যাকে । এলাকাটি এই শহরের প্রাচীনতম স্থান , যার উৎপত্তি ১৭০০ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে, ওয়াশিংটনের আগে। জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়, দেশের প্রাচীনতম রোমান ক্যাথলিক এবং জেসুইট কলেজ, এখানে অবস্থিত। আজ, জর্জটাউনের ঐতিহাসিক বাড়িগুলির পরিপাটি রাস্তা এবং এর বুটিক শপ, ক্যাফে, রেস্তোরাঁ এবং ছোট জাদুঘরগুলি এই অঞ্চলকে একটি জনপ্রিয় অবকাশ কেন্দ্রে পরিণত করেছে । 

কালচারাল মিনিস্ট্রির সাথে আইভিএলপি সদস্যদের মিটিং শেষে তোলা

ওয়াশিংটন ডিসির ঐহিত্যবাহী ভবন ন্যাশনাল আর্কাইভ। বিশাল ভবনের  ভেতরে বাইরে শতশত বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধারণ করে আছে। সুপ্রিম কোর্ট ভবন,পুরনো সিনেট চেম্বার ভবন, জাতীয় চিড়িয়াখানা, ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি, আর্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ বিল্ডিং, এস ডিলন রিপলে সেন্টার, স্মিতিসোনিয়ান ইন্সটিটিউশন বিল্ডিং, ন্যাশনাল পোট্রেট গ্যালারি, ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব আমেরিকান হিস্ট্রি, ন্যাশনাল পোস্টাল মিউজিয়াম, জুডিশিয়ারি স্কোয়ার,ন্যাশনাল গ্যালারি অব আর্টস, আছে জন এফ কেনেডি সেন্টার ফর দ্য পারফরমিং আর্টস, ন্যাশনাল অপেরা হাউস, ফোর্ড থিয়েটারসহ আরও কত কত ঐহিত্যবাহী ভবন। 
ওয়াশিংটনের আর এক বিস্ময় পেন্টাগন ।মেঝের আয়তনে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অফিস, প্রায় আশিটি ফুটবল মাঠের সমান এবং পঁচিশ হাজারের বেশি মানুষ এখানে কাজ করের। আসলে পেন্টাগন নিজেই যেন একটি ছোট শহর।
আমেরিকান কোয়ার্টারে প্রথন স্থান পাওয়া নারীরা 

আমি মুদ্রা সংগ্রাহক নই । তবে ভ্রমণ করবার সময় সে দেশের আধুনিক মুদ্রা ও টাকার সামান্য সংগ্রহ রয়েছে আমার ঝুলিতে । এ বছর জানুয়ারী মাসে পত্রিকা মারফত জেনেছিলাম যুক্তরাস্ট্রের কোয়ার্টারে অর্থাৎ ২৫ সেন্টে স্থান পাচ্ছে  প্রথমবারের মত ৩/৪ জন নারী । 
এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো প্রথম কোন কৃষ্ণাঙ্গ নারীর ছবিও স্থান পাচ্ছে কোয়ার্টারে । গত ৯০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কোয়ার্টার নামে পরিচিত ২৫ সেন্টের এ মুদ্রাটির এক পিঠে দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের ছবি এবং অপর পিঠে ঈগলের ছবি ছাপা ছিল। ২৫ সেন্টের এ মুদ্রায় এবার দেখা মিলবে কবি, সাহিত্যিক ও নাগরিক অধিকার কর্মী মায়া অ্যাঞ্জেলুর ছবি।
'আমেরিকান উইমেন কোয়াটার্স প্রোগ্রাম' সংক্রান্ত একটি আইন ২০২১ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে পাস হয়েছিল। এ আইন অনুসারে ২০২২ সাল থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতি বছর কোয়ার্টারে একজন করে উল্লেখযোগ্য আমেরিকান নারীর ছবি প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে মায়া অ্যাঞ্জেলুর পাশাপাশি একই সম্মাননা দেওয়া হয়েছে মহাকাশে পা রাখা প্রথম আমেরিকান নারী স্যালি রাইড, নিউ মেক্সিকান নারী অধিকার কর্মী নীনা ওটেরো-ওয়ারেন, চিনা বংশোদ্ভূত আমেরিকান চলচ্চিত্র তারকা অ্যানা মে ওং এব‌ং চেরোকি বংশোদ্ভূত নেত্রী উইলমা ম্যানকিলারকেও।
আমি সংগ্রহে রয়েছে মাত্র দুটি কোয়ার্টার একটি মায়া অ্যাঞ্জেলু অন্যটি স্যালি রাইড এর । আমেরিকায় সদাই পাতি করার সময় দোকানে জিজ্ঞেস করছিলাম কোয়ার্টার এর কথা কেউ সদুত্তর দিতে পারেনি । নীনা ওটেরো-ওয়ারেন, অ্যানা মে ওং এব‌ং নেত্রী উইলমা ম্যানকিলারকের নামও কেউ জানে না । পরে কাজ আর ভ্রমণের আধিক্যে নিজেই ভুলে গেছি । তাই বাকি মুদ্রা গুলো সংগহ করা হয়নি । 


মায়া অ্যাঞ্জেলুর কথা একটু বলি - 'আই নো হোয়াই দ্য কেজড বার্ড সিংস' গ্রন্থের স্রষ্টা মায়া অ্যাঞ্জেলু ১৯২৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরিতে জন্মগ্রহণ করেন। এক সময় তিনি কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ও ম্যালকম এক্সের মতো ব্যক্তিদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন। তিনি ২০১৪ সালে ৮৬ বছর বয়সে মারা যান। ২০১০ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাকে 'মেডেল অব ফ্রিডম' পদকে ভূষিত করেছিলেন।
এবার স্বল্প আকারে কিছু মার্কিন রাষ্ট্রীয় অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরি - 

আমেরিকান ফেডারেল গভঃ এর স্টেট ডিপার্টমেন্ট ছাড়াও, ডিপার্টমেন্ট অফ ইন্টেরিয়র এর কর্মকর্তাদের সাথে বাংলাদেশ টিমের সাক্ষাত ও মিটিং পর্ব ছিল। 

আমেরিকার সরকারী ভবন গুলো বাইরে থেকে দেখলে বেশ সাদামাটা লাগে। কিন্তু প্রবেশদ্বার দিয়ে ভিতরে গেলে বোঝা যায় বিশেষ কোন জায়গায় এসেছি। ভবনের ভেতরের সাজসজ্জা ও সিকিউরিটি সিস্টেম বলে দেয় সেকথা। ভালোই সময় যায় সিকিউরিটি পার হতে। তারপর একটি জায়গা থেকে বলে দেবার পর ভিজিটর পাস নিতে হয়। ভিজিটর পাস পাবার পর একজন প্রতিনিধি সবাইকে রিসিভ করে। 

ডিপার্টমেন্ট অফ ইন্টেরিয়র কাজ করে মুলত কালচারাল হেরিটেজ নিয়ে। অনেক গুলো শাখা আছে তাদের যেমন, ইন্টারন্যাশনাল কালচারাল এফেয়ার্স, ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস ইত্যাদি। ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস এর আন্ডারে রয়েছে আমেরিকার সব ন্যাশনাল পার্ক। আমেরিকার ন্যাশনাল পার্ক গুলোর আয়তন নতুন করে লিখবার কিছু নেই। এক একটি আয়তনে ৪টি বা তারও অধিক বাংলাদেশের আয়তনের সমান। 

ইন্টেরিয়র ডিপার্টমেন্টে প্রবেশ করার সাথে সাথে থমাস মরান এর অরিজিনাল দুটি তৈলচিত্র আপনাকে স্বাগত জানাবে। তারপর দেখা যাবে আমেরিকার জাতিয় পতাকা আর ডিপার্টমেন্ট অফ ইন্টেরিয়র এর পতাকা পাশাপাশি দাড় করানো রয়েছে। সেই সব পার হয়ে বেশ খানিকক্ষন হাঁটলে বিভিন্ন কক্ষ চোখে পড়বে।নির্দিষ্ট মিটিং কক্ষেই আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো। 
কর্মকর্তারা আমাদেরকে তিনটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন এর মাধ্যমে বোঝালেন ডিপার্টমেন্ট অফ ইন্টেরিয়র কিভাবে কাজ করে। ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস তাদের হেরিটেজ, উদ্ভিদ, প্রানীকুল কিভাবে রক্ষা করছে ও সংরক্ষন করছে। 

আমার প্রশ্ন ছিল তাদের কাছে, এত বড় আয়তনের এক একটি পার্ক সংরক্ষন ও পর্যটকদের নিয়ন্ত্রন করতে তারা কি কি চ্যালেঞ্জের সন্মুক্ষীন হয়েছিলেন বা হন। তাদের উত্তরে যা বুঝেছি তা হলো - প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মুখে পরতে হয় তাদের। ন্যাশনাল পার্কের নীতিমালার সঠিক প্রয়োগই তাদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সাহায্য করে। 
তবে ভীষণ অভিভুত হয়েছি, তাদের কার্যপদ্ধতি দেখে ও জেনে। মিউজিয়াম তৈরী, পরিচালনা ও ঐতিহ্য সংরক্ষনে মার্কিন জাতি দারুন সিরিয়াস ও বদ্ধ পরিকর। যদিও তাদের ইতিহাস খুব বেশি পুরোনো নয়।
গল্প শেষ করবো, একজন বিশেষ ব্যক্তির প্রসঙ্গ দিয়ে । 
ইউ এস স্টেট গভঃ এর পক্ষ থেকে IVLP 2022 এর অংশগ্রহনকারিদের জন্য সিটি ট্যুর এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সিটি ট্যুর এ আমরা বাংলাদেশ থেকে আসা ৫ জন, স্টেট গভঃ এর পক্ষে দুই জন দোভাষী আজ অর্ধেক বেলা ট্যুর করেছি। 
হোটেলের লবিতে এসে আমাদের ট্যুর গাইডকে দেখে চোখ গোল গোল হয়ে গেল, ৬৮ বছর বয়সী নারী ট্যুর গাইড গ্রাবী । ইউরোপে এরকম অনেক ট্যুর গাইড পেয়েছি, যাদের বয়স ৫০ এর উপরে। গ্রীসে আমার গাইড ছিল ৬২ বছর বয়সী ম্যারিমিলা। কিন্তু ৬৮ বছরের প্রথম কাউকে পেলাম। গ্রাবী আমার থেকেও জোড়ে হাঁটতে পারে। গ্রাবী  ট্যুর গাইড হিসেবে কাজ করছে ২৫ বছর থেকে। উচ্ছ্বাসের বিন্দু মাত্র ঘাটতি দেখিনি ৪ ঘন্টার ট্যুরে।বার বার নিজের দেশের কথা মনে হচ্ছিল ,ট্যুর গাইড কিংবা ট্রাভেল নিয়ে আমাদের সমাজ কবে এরকম উচ্ছ্বসিত সমাজ হবে !!

এই লেখার মাধ্যমে স্মৃতি মানসপটে আবারও ভেসে উঠলো আইভিএলপি আর ওয়াশিংটন ডিসি । মনে হলো আবারও দৌড়ে গিয়ে দেখে আসি সেই শহরকে !! 

(ভ্রমণের সময়ে এই দুর্লভ ছবিগুলো ক্যামেরা বন্দী করেছেন ঐতিহ্য পর্যটক ও লেখক এলিজা বিনতে এলাহী।- সম্পাদক)  

 

সর্বশেষ